ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা।

জীবনের সকল বিষয়ে ইসলামের কাছে স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোণ এবং জীবনের সকল সমস্যার সমাধান পেশ করে ইসলাম। ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ কোন মানুষের তৈরী নয় বরং এটা মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে প্রেরিত। মহান স্রষ্টা মহাবিশ্বের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন তিনিই নারী ও পুরুষের স্রষ্টা। তিনি মানব জীবনের যাবতীয় বিধান ঐশী গ্রন্থের মাধ্যমে অবতীর্ণ করেছেন এবং রসূলগণের ( আল্লাহর বাণী বাহক বা তাঁর দূত ) মাধ্যমে বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করে দেখিয়েছেন। এই জীবন বিধান মানুষের স্বভাব প্রকৃতির অনুকূল এবং জীবনকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সহায়ক। বিবাহের মাধ্যমে নারী -পুরুষের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং একটি পারিবারিক জীবনের সূত্রপাত হয়। কয়েকটি পরিবার মিলে গড়ে ওঠে সমাজ। মানব জাতির সামনে এটা একটা বড় প্রশ্ন যে সমাজ কোন্ নীতি আদর্শের ভিত্তিতে চলবে যার মাধ্যমে সমাজে প্রত্যেক ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে যথার্থ ভারসাম্য থাকবে ? এই নীতি ও আদর্শের নামেই জীবন বিধান। এই জীবন বিধানের মূল লক্ষ্য হবে নারী ও পুরুষের ব্যক্তিত্বের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ, একটি উন্নত পবিত্র সমাজের প্রতিষ্ঠা এবং উন্নত মানব সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন। ইসলাম বিরোধীদের সমালোচনা : আমাদের দেশের বৃহত্তম জনসংখ্যা ইসলামের ব্যাপারে প্রায় অন্ধকারে অবস্থান করছে। তারা ইসলামের পারিবারিক বিধিবিধানকে মানবজাতির জন্য বিশেষ করে মহিলাদের জন্য একটি বোঝাস্বরূপ মনে করে। তারা মনে করে এটা নারী সমাজের প্রতি জুলুম। কোন কোন সমালোচক ইসলামের বিধান না জানার কারণে বিভ্রান্তির শিকার হন। কেউ কেউ আবার জেনে-বুঝেই এধরনের সমালোচনা করে থাকেন। ইসলাম একটি উন্নত জীবনাদর্শ হওয়া সত্ত্বেও যুগে যুগে নানান সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আজকাল তিন তালাক, একাধিক বিবাহ এবং হালালা ( তালাক প্রদত্ত ফিরিয়ে নেওয়ার পদ্ধতি - বেআইনি কোন কিছুর আইনিকরণ ) ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রচার মাধ্যম অপপ্রচার ছড়িয়ে দিচ্ছে। তারা এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে ইসলাম মহিলাদের সমান অধিকার দেয়নি। অপরদিকে ইসলামের ব্যাপারে অজ্ঞ দায়িত্বজ্ঞানহীন কিছু মুসলিম মহিলা আদালতে মামলা দায়ের করেছে যে একাধিক বিবাহ এবং তিন তালাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক। কারণ এর মাধ্যমে মহিলাদের প্রতি অত্যাচার করা হচ্ছে। মুসলিম সমাজের পদস্খলন : ইসলামের পারিবারিক বিধি বিধানের প্রতি সমালোচনার অন্যতম কারণ মুসলিম সমাজের পদস্খলন। মুসলিমদের ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়া ও অজ্ঞতার কারণে বহু সমস্যা তৈরি হয়েছে। যেমন - বিবাহকে সহজ সরল করার পরিবর্তে বাড়তি অপচয় ও নানান কুসংস্কারের বেড়াজালে তাকে এক জটিল বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে। সামান্য ছোটখাটো বিষয়ে নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতা জীবনকে দুঃসহ করে তোলে। সামান্য বিষয়ে ঠোকাঠুকি হলেই পুরুষরা একসঙ্গে তিন তালাক দিয়ে ফেলে। এর কারণে একটি পরিবার উজাড় হয়ে যেতে বসে এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্তানদের নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। আবার যখন স্বামী- স্ত্রীর পুনরায় ইচ্ছা প্রকাশ করে তখন হালালার মতো অবৈধ পদ্ধতি অবলম্বন করে। ( স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সঙ্গে বিবাহ দেওয়া হয়। পরিকল্পনা মতে সে তালাক দেয় তারপর আবার পূর্বতন স্বামী- স্ত্রীকে বিবাহ বন্ধনে জুড়ে দেওয়া হয়।) একাধিক স্ত্রী থাকলে সকল স্ত্রীর প্রতি সমান আচরণের বিধানকে স্মরণে রাখা হয় না। মুসলিম সমাজের একটা বড় পদস্খলন এই যে, সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে মহিলাদেরকে প্রায়ই বঞ্চিত করা হয়। তাদের পিতামাতা বা অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের নিকট থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়। যদিও ইসলামী শরীয়তে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশ নামা রয়েছে। ইসলামী পরিবার : ইসলামের পারিবারিক জীবনাদর্শ মানবতার জন্য রহমত স্বরূপ। এর সূত্রপাত হয় পরিবার থেকে যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি স্বতঃস্ফূর্তভাবে দায়িত্ব পালন করে থাকে এবং একে অপরের পারস্পারিক অধিকার আদায় করে থাকে। এর ফলে সার্বিকভাবে সকলের উন্নয়ন সাধিত হয়। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ও উপায় উপার্জনের দিক থেকে পরিবার ছোট বড় হয়। ক্ষুদ্র পরিবার এবং একান্নবর্তী যৌথ পরিবার হয়। ছোট পরিবারে ব্যক্তি নিজের স্ত্রী পুত্রদের নিয়েই থাকেন। কখনো কখনো পিতা-মাতা বা নিকটাত্মীয়গণ সদস্য হয়ে থাকেন। অপরদিকে যৌথ পরিবারে পুত্র ও পুত্রবধু এবং তাদের সন্তান সন্ততিও শামিল থাকে। ইসলামী বিধান অনুযায়ী সংসার চালানোর দায়িত্ব থাকে পুরুষের উপর। স্ত্রী, সংসার ও পুত্র কন্যার লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করেন। এ ব্যাপারে তারাই দায়িত্বশীল। অর্থাৎ মহিলারা ঘরের রক্ষক। তাঁদের দায়িত্ব এটা যে যদি ঘরে সৃষ্টি কর্তা ও তাঁর রসূলের নির্দেশএর বিরুদ্ধে কিছু হয় তাহলে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে। এটা একমাত্র সেই অবস্থায় সম্ভব যখন সেই মহিলা ঈমানদার অর্থাৎ সত্যবাদী হবে। আজ সমাজে ইসলাম বিরোধী রসম-রেওয়াজ ছড়িয়ে পড়ছে তার অন্যতম কারণ বাড়ির মহিলাদের দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান না থাকা। যদি একজন মুসলিম মহিলা এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী বাড়ির সবকিছু পরিচালিত হবে তাহলে সে ঘর একটি দৃষ্টান্তমূলক পরিবার হতে পারে। বিবাহ হোক সহজ সরল : ইসলাম আমাদেরকে এটা শেখায় যে কন্যার বিবাহ দেওয়ার সময় পাত্রের দ্বীনদারীর দিকে বেশি খেয়াল দেওয়া হোক, তার অর্থ সম্পদ এবং উঁচু ডিগ্রী যেন পছন্দের অন্যতম মাপকাঠি না হয়। বরং তার চারিত্রিক মাধুর্য, সৎ সাহস মানসিক উদারতা যেন এমন পরিমাণে থাকে যাতে সে জীবনের নানান চড়াই-উৎরাই হাসিমুখে বরদাস্ত করে নিতে পারে এবং আপন পরিবার ও সন্তান-সন্ততিকে আদর্শ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। অনুরূপভাবে পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই মানদণ্ডকে সামনে রাখা দরকার। ধন-সম্পদ, রূপ সৌন্দর্য্য ইত্যাদি বিষয়কে নির্বাচনের মানদণ্ড করা একেবারেই উচিত নয়। বরং চরিত্র মাধুর্য ও দ্বীন দারীকে অগ্রাধিকার প্রদান করা উচিত। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, "পাত্রী নির্বাচনে চারটি জিনিস দেখা হয়ে থাকে। ধন-সম্পদ, বংশধারা, রূপ সৌন্দর্য ও দ্বীনদ্বারী। তোমরা দ্বীনদ্বারী নারীকে বিবাহ করো।" নবী (সাঃ) একথা এজন্য ব্যক্ত করেছেন যে, এই সময়ের সঠিক নির্বাচন এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত রচনা করে। নেক ও চরিত্রবান সন্তান পিতা মাতার চোখের শীতলতা এবং পিতা-মাতাসহ পরিবারের সদস্যদের জান্নাতের সোপান হতে পারে। পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের পর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সহজ-সরলভাবে বিবাহের কাজ সম্পন্ন করার জন্য। কিন্তু দেখা যায় বিবাহের নামে ধনী-গরীব সকলেই নিজেদের বাহাদুরি দেখানোর জন্য প্রচুর অপচয় করে। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন -" সবচেয়ে কল্যাণকর বিবাহ সেইটি যে বিবাহের সবচেয়ে কম খরচ করা হয়।" দুঃখের বিষয় বর্তমানে সেই বিবাহকে উত্তম বিবাহ ভাবা হয় যে বিবাহে লোক দেখানোর জন্য ও নিজের বড়্ত্ব জাহির করার জন্য সীমাহীন খরচ করা হয় এবং সম্পদের অপচয় করা হয়। বিবাহকে নিজেদের অবৈধ মনোবাসনা পূরণ করারও সমস্ত রকম অপকীর্তি সম্পাদন করার একটা উপলক্ষে পরিণত করা হয়েছে। এ উপলক্ষে নানান রীতি পদ্ধতি ও আচার-অনুষ্ঠান চালু করা হয়েছে। যেমন - সালামি, পান-চিনি, জারি গান ইত্যাদি। কন্যার বিদায় দেওয়া টাকেও বিবাহের অংশে পরিণত করা হয়েছে। কখনও কখনও পাত্রপক্ষ বিদায়এর নামে উৎসব করে নিজেদের শান শওকত জাহির করে। আবার কখনো পাত্রী পক্ষ নিজেদের জাহির করার জন্য ধুমধাম করে বিদায় অনুষ্ঠান করে থাকে। যদিও এই সমস্ত রীতিনীতি সরাসরি ইসলামের খেলাপ। এ ধরনের কার্যকলাপ অবৈধ পন্থায় নিজেদের বড় দেখানোর অপকৌশল ছাড়া আর কিছু নয়। সৃষ্টিকর্তা বলেন, " তোমরা অবৈধ পন্থায় একে অপরের সম্পদ হরণ করিও না।" সমাজে আরো একটা ভয়ঙ্কর অবস্থা চালু হয়েছে। কোন বাড়িতে যেদিন কোন কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে সেদিন থেকে পিতা-মাতাকে পণের অর্থ সংগ্রহের চেষ্টায় ব্যাকুল থাকতে হয়। কারণ এতে তার সম্মান ও কন্যার জীবন সুরক্ষিত থাকবে। এই পণপ্রথা না জানি কত নারীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এর কারণে নারীদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়। পণ কম দেওয়ার কারণে বধূদের জীবন সংশয় ঘটে যায়। উঠতে-বসতে তাদেরকে খোটা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ইসলামের মোহরানা আদায় করার জন্য যে বিধান দেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। যদিও পাত্রীকে মোহরানা আদায় করে বিবাহ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সৃষ্টিকর্তা বলেন, " তোমরা মোহরানা আদায় কর সন্তুষ্টচিত্তে।" বর যাত্রী, কন্যাযাত্রী ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়, লেনদেনের বিষয়েও দর কষাকষি চলে পুরোদস্তুর। কিন্তু যখন মোহর নির্ধারণ করার কথা ওঠে তখন হয় মোহর খুব সামান্য ধরা হয় অথবা খুব বেশি। অনেক সময় সমাজের সামনে নিজেদের বড়ত্ব জাহির করার জন্য নির্ধারণ করা হয়। আদায় করার উদ্দেশ্যে নয় বরং মাফ করিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে। মোহর বিবাহের অব্যবহিত পর আদায় করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেখা যায় কোন পাত্র বিবাহের মজলিশে যদি মোহর আদায় করতে চায় তাহলে সমাজে তার প্রতি সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা় হয়। মনে করা হয় তার বিবিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিবাহ করার বাসনা রয়েছে। পারিবারিক কলহ এর কারণ : যখন একজন কন্যা বিবাহ করার পর নতুন পরিবেশে আসে তখন তার স্বামী ছাড়া পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে নিয়ে চলতে হয়। যেমন শাশুড়ি, ননদ, দেবর, ভাসুর ইত্যাদি। এ সম্পর্ক গুলির মধ্যে শাশুড়ি বৌমার সম্পর্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । অনেক সময় প্রথম দিন থেকে এখানে এক মানসিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝা যাবে এই দ্বন্দ্বএর কেন্দ্রবিন্দুতে একজন ব্যক্তি থাকে যার সঙ্গে শাশুড়ি এবং বউমা উভয়ের সম্পর্ক নিবিড়। উভয়ের চাহিদা মতো চলতে গিয়ে সেই ব্যক্তিকে (পাত্রকে) দুটানার শিকার হতে হয় । একদিকে থাকে মা যার প্রতি থাকে গভীর শ্রদ্ধা ভালোবাসা নিবিড় সম্পর্ক । অন্যদিকে থাকে স্ত্রী যে আপন পিতা-মাতা ভাই-বোন সবকিছু ছেড়ে তার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। তার স্বপ্ন শ্বশুরবাড়িতে সে সবার সঙ্গে মিলেমিশে খুবই আনন্দে থাকবে। কিন্তু টানাপোড়েনের তালে কোথায় যেন তার সাজানো স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হতে দেখে। কলহের দ্বিতীয় কারণ- শাশুড়ি দের সেকেলে মানসিকতা। একদিন তিনিও বউমা ছিলেন। তিনিও নতুন শ্বশুর বাড়িতে এসেছিলেন । এখন তার ঘরে নতুন বউমা আসতে তিনি সব নিজের অতীতের সঙ্গে বর্তমানকে মেলাতে চান। যা প্রায় সম্ভব নয়। শাশুড়ি কথায় কথায় অতীতের কথা বলে বৌমাকে খোটা দিতে থাকে। ফলে এক দ্বান্দ্বিক পরিবেশের সূত্রপাত হয়। কলহের তৃতীয় কারণ সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখার মানসিকতা। সাধারণত শাশুড়িগণ মনে করেন বৌমাকে তার কথা মত চলতে হবে। এমনকি কোথাও আসা-যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া সব বিষয়ে তাঁর অনুমতি নিতে হবে। বউমার উপর শাশুড়ি মায়ের নিয়ন্ত্রণ অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়। কলহের একটা কারণ গীবত। অবিশ্বাস্য ও অজানা আতঙ্ক। শাশুড়ির মনে অনেক সময় একটা আতঙ্ক কাজ করে বউমা ছেলেকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবে না ? ফলে বৌমার বিরুদ্ধে নিন্দামন্দ দেওয়া শুরু হয়ে যায়। অনেকের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয় যে বউমা তার ছেলের উপার্জনের অর্থ এবং ঘরের জিনিসপত্র যেন অন্য কোথাও পাঠিয়ে না দেয়। এই ভয়ে সবসময় বউমাকে দেখতে থাকে একটা সন্দেহের চোখে। উচ্চশিক্ষিত বৌমাদের সঙ্গে পুরনো ধ্যান-ধারণার শাশুড়িদের চিন্তার অনেক বৈপরীত্য দেখা যায়। কখনো কখনো কম লেখাপড়া এবং অজ্ঞতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শাশুড়ি বৌমার মধ্যে কখনো কখনো অহম একটা সমস্যা হিসাবে সামনে আসে। অর্থ সম্পদ, রূপ সৌন্দর্য, বংশ মর্যাদা ইত্যাদি দিক থেকে একে অপরের থেকে বড় এই মানসিকতা তাদেরকে দ্বন্দ্বের দিকে ঠেলে দেয়। বউ ও মেয়ের মধ্যে বৈষম্য এবং মেয়ের প্রতি পক্ষ পাতিত্ব মূলক আচরণও অনেক সময় কলহের কারণ হয়। সাধারণত বউমার থেকে মেয়েকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। একাধিক বউমার মধ্যে কোন একজনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া বা বউদের মধ্যে সুবিচার ও ভারসাম্য রক্ষা না করার ফলেও অনেক সময় সংসার কলহে লিপ্ত হয়ে যায়। কোন কোন পরিবারে কোন কোন বউমা অশ্লীল কাজের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। তাদের আচার-আচরণ অনেক সময় পেরেশানির কারণ হয়। অনেকে স্বামীর উপর আধিপত্য রাখতে গিয়ে সীমা অতিক্রম করে ফেলে। তার স্বামী সন্তান ছাড়া সে আর কাউকে চিনতে চায় না। তার স্বামী যে কারও পুত্র বা কারও ভাই সে কথা সে ভাবতে ভুলে যায়। অনুরূপ ভাবে স্বামী রাও এ ধরনের আচরণ করে থাকে। তার প্রেম ভালোবাসা শুধু আপন স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি ই থাকে। বৃদ্ধ দুর্বল পিতা মাতার প্রতি তাদের সেই দৃষ্টিভংগী আর থাকে না যা বিবাহের আগে ছিল। শাশুড়ি বউ এর ঝগড়ায় সাধারণত অহংকার, গর্ব, মিথ্যা, চুগলখুরি, গীবত, হিংসা, গালিগালাজ, প্রতিশোধ স্পৃহা এমন আকার ধারণ করে যা পুরো পরিবারের দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তির পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। শাশুড়ি যদি নিজের অতীত অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে নিজের দায়িত্বে সবার প্রতি যত্নবান হন আপন ব্যবহার ও চরিত্র দিয়ে যদি নতুন বউমা ও আত্মীয় স্বজনের মন জয় করে নেন এবং সন্তান যদি আপন পিতা মাতা ও স্ত্রীর প্রতি তাদের হক আদায় করেন ও সকলের প্রতি সুবিচার ও সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখেন তাহলে ঘর জান্নাতের টুকরায় পরিণত হয়ে যায়। আমাদের করণীয় : পারিবারিক জীবনের এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের আন্তরিক হতে হবে। ১। সবচেয়ে প্রথম দরকার মানসিক প্রস্তুতি। আমরা নারী পুরুষ উভয়ের প্রতি আবেদন জানাই তারা যেন কুরআন হাদীস বুঝে পড়ে এবং বিশেষ করে ইসলামের পারিবারিক বিধানকে গভীর ভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করে এবং সেই শিক্ষা অনুযায়ী একটি সুখী সংসার ও সুন্দর পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। ২। দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে সন্তান সন্তুতিদের নৈতিক প্রশিক্ষণ। তাদের লালন পালনের পাশাপাশি যাতে নৈতিক শক্তির বিকাশ ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানদের মধ্যে স্রষ্টার ভয় ও পরকালে জবাব দেওয়ার চেতনা জাগাতে হবে। যখন তারা বিবাহের বয়সে পৌঁছাবে তখন তাদের কে ইসলামের পারিবারিক নিয়ম নীতির ব্যাপারে ভালোবাসা অবগত করাতে হবে। ৩। বিবাহকে সহজ করার ব্যবস্থা করতে হবে। রসম রেওয়াজ পরিহারের চেষ্টা করতে হবে। ৪। কাউন্সেলিং সেন্টার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে হবে। আপনার পরিবার, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব বা মহল্লায় কোন পারিবারিক কলহ দেখা দিলে তাকে কাউন্সেলিং সেন্টার এর মাধ্যমে সমাধান করার পরামর্শ দিতে হবে। চলবে- ----------------------------------------- * বানান ভুল ও ভাষা গত ত্রুটি থাকলে মার্জনা করবেন। ** কোন তথ্যের অসংগতি থাকলে বলবেন সঠিক করার চেষ্টা করবো। ***MOSTAK HOSSAIN MONDAL ***

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

কিরে চাকরিটা হলো ?

প্রবন্ধ রচনা:- বাংলার উৎসব

ভালোবাসা কি সত্যি ছিল?