কিরে চাকরিটা হলো ?
- না রে শ্রুতি ।
- কেনো এটা তো সব ঠিক ছিল!
- হয়তো আমি যোগ্য নই।
- এই চুপ করতো সেন্টু মারিস না বেশি ।
- না রে সত্যি আমি কি ভুল করছি বুঝতে পারছি না । সবার শুধু এক্সপিরিয়েন্স চাই । যদি কেউ সুযোগটাই না দেয় এক্সপিরিয়েন্স পাবো কোথা থেকে বল তো ।
- ঠিক তুই তোর মনের মতন চাকরি পাবি ওতো ভাবিস না ।
- কি করবো আর বলতো ? আমি বোধয় ওই সেলসের চাকরিটা পেয়েছিলাম ওটাই করে নিলে হতো । এখন বুঝতে পারছি কি ভুল করেছি আমি ।
- তুই তাহলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কেনো পড়লি বি বি এ পড়তে পারতিস ।
- ধূর আমার তো ভালো লাগতো এবং এখনো লাগে তাই পড়েছিলাম।
- তাহলে, তুই কিচ্ছু ভুল করিসনি, তুই শুধু নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েছিস।
- এই কলকাতার বাজারে এটাই সবচেয়ে বড় ভুল করেছি রে ।
- ওতো ভাবিস না ঠিক পেয়ে যাবি।
- বাড়ির একমাত্র ছেলে তো ভাবতে হয় । এই বছর এপ্রিলে পঁচিশ বছর বয়স হয়ে যাবে । এখনো বাবাকে দেখি কাজে যেতে আর আমি নাকি ঘরে বসে তার টাকায় তারাম করে খাচ্ছি । তাছাড়া তুই ভাব তো তোর বাড়িয়ে লোক একটা বেকার ছেলের সাথে তোর বিয়ে দেবে ?
- আরে এতো কিছু কেনো ভাবছিস চাকরি তো তুই পেয়েই যাবি।
- যখন দেখি আমার থেকে ছোটো ছেলে গুলো কি সুন্দর নিজের সংসারের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে আর আমি নাকি এখনো বাপের হোটেলে চারবেলা পরে পরে গিলছি ,নিজেকে তখন শেষ করে দিতে মন চায় ।
- চুপ কর তুই । আচ্ছা তুই লাস্ট যেই ইন্টারভিউ টা দিলি ওটাতেই তো ফ্রেসার্স নিচ্ছিল আর তুই পাসনি!! তুই সিওর তো ?
- হ্যাঁ আজ মেল আসার কথা ছিলো আমি সকাল থেকে চেক করছি কিছু আসেনি ।
- ঠিক আছে আরও তো কোম্পানি আছে পেয়ে যাবি।
এই সব আলোচনা করতে করতেই সুমন্ত আর শ্রুতি হাঁটছিল । সুমন্ত মন মরা হয়ে ভাবছিল এটাই শেষ হয়তো বেকার পৃথিবীতে বোঝা হয়ে থেকে কোনো আর লাভ নেই আর শ্রুতি ক্রমাগত তার ভরসা বাড়াছিলো। এমন সময় সুমন্তর ফোন বেজে ওঠে …
- হ্যালো সুমন্ত …
- হ্যাঁ বলছি ।
- আমি এস এস গ্রুপ এর এইচ আর দেবব্রত বলছি ।
- হ্যাঁ স্যার বলুন ।
- আপনি ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন আমাদের কোম্পানিতে কাল । আপনি সিলেক্টেড হয়েছেন । আপনার জব লোকেশন পুনে কিন্তু আপনার সিভিতে যে মেল আইডি ভুল দেওয়া আছে। আপনার মেল আইডিটা একটু আমার এই নম্বরে ওহাটসঅ্যাপ করে রাখুন আমি আপনার অফার লেটারটা পাঠাচ্ছি ।
- পুনে কেনো কলকাতায় তো ব্রাঞ্চ আছে ?
- পুনেতে এখন ছেলে লাগবে আমাদের ওই জন্য আপনাকে প্রথম প্রজেক্ট ওখানেই করতে হবে তারপর না হয় এখানে জয়েন করে যাবেন ।
- আচ্ছা ঠিক আছে আমি পাঠাচ্ছি আমার মেল ।
.
.
.
- কিরে কে কল করেছিল ?
- আমি চাকরিটা পেয়ে গেছি কিন্তু…
- আরে আবার কিন্তু কি পাগলা চল কফি হাউস যাবো ট্রামে করে ।
- পুনের ব্রাঞ্চে পেয়েছি । প্রথম প্রজেক্ট নাকি ওখানেই করতে হবে ।
- এমা চলে যাবি !
- কি করি বলতো ?
- যা কর না আবার এখানে আসবি তো তাতেই শান্তি খালি আমায় আবার ভুলে যাস না ? এমনিও এই পোড়া শহরে কিচ্ছু নেই আর ।
- পারবো তো থাকতে ?
- হ্যাঁ রে রোজ আমায় কাজ করে এসে ভিডিও কল করবি ।
- দেখি যাই কি জানি কি করবো !
- আরে ভাই বড্ড নেগেটিভ তো তুই। বাদ দে না চাকরি পেয়েছিস তো বেশ । চল কফি হাউস আজ আমি তোকে চা খাওয়াবো।
- আচ্ছা দারা এখানে ।
শ্রুতিকে দাঁড়াতে বলে সুমন্ত দৌড়ে যায় রাস্তার ওপারে একটা ফুলের দোকানে । সেখান থেকে এক গুচ্ছ সূর্যমুখী কিনে নিয়ে আসে শ্রুতির জন্য ।
- কিরে সূর্যমুখী কেনো ?
- এমনি দূরে চলে যাচ্ছি তারউপর আবার পথে কাঁটা থাকবে তাই কাঁটা ওলা গোলাপ আর নাই বা দিলাম তাই সূর্যমুখী নিলাম তোর জন্য ।
- পাগল একটা বাড়িতে জানিয়েছিস? ফোন কর আগে ।
- ও হ্যাঁ বাড়িতে জানাই আগে ।
~বাউন্ডুলে
ছবি সংগৃহিত
Comments
Post a Comment